আইনগত নির্দেশিকাভূমি গাইড

রেজিস্ট্রেশনের সময় সাবধানতা অবলম্বন

October 9, 2025 ৭ মিনিটের পড়া Mouza Map টিম

জমি ক্রয়ের আগে খতিয়ান, নকশা ও উত্তরাধিকারী প্রমাণ যাচাইসহ ১১টি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে নিরাপদে দলিল নিবন্ধন করুন।

এক খণ্ড জমির মালিক হওয়া আমাদের সবারই আকাঙ্ক্ষা। তবে সেই স্বপ্ন পূরণে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেকে সঠিক ও ভুলের পার্থক্য বুঝতে না পেরে প্রতারণার শিকার হন। বিশেষ করে শহর ও উপশহরের জমি কেনাবেচায় দালাল বা প্রতারকদের কারণে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

জমি ক্রয়ের সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করলে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। তাই দলিল নিবন্ধনের আগে কোন কোন কাগজপত্র যাচাই করা জরুরি তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।

একে ক্রেতা সাবধান বা Doctrine of Caveat Emptor নীতিও বলা হয়—ক্রেতাকেই নিশ্চিত হতে হবে যে জমির মালিকানা অপরিবর্তনীয় ও আইনগতভাবে সুরক্ষিত।

রেজিস্ট্রেশনের সময় করণীয় প্রধান সতর্কতা

  1. জরিপের মাধ্যমে প্রণীত রেকর্ড—খতিয়ান ও নকশা—সঠিক আছে কিনা যাচাই করুন।
  2. জমির মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর ও উক্ত দাগে জমির মোট পরিমাণসহ তফসিল মিলিয়ে নিন।
  3. সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড ও মাঠ পর্চা দেখে জমির মালিকানা ইতিহাস নিশ্চিত করুন।
  4. বিক্রেতা যদি ক্রয়সূত্রে মালিক হন তবে তার ক্রয়ের দলিল ও রেকর্ডের তথ্য একসঙ্গে মিলিয়ে মালিকানা নিশ্চিত করুন।
  5. উত্তরাধিকারসূত্রে মালিকানার ক্ষেত্রে সর্বশেষ জরিপে বিক্রেতার নাম রয়েছে কিনা এবং পূর্ব মালিকের সঙ্গে সম্পর্ক স্পষ্ট কিনা পরীক্ষা করুন।
  6. জরিপ চলমান এলাকায় বিক্রেতার সংরক্ষিত মাঠ পর্চা বৈধ ও বর্তমান কিনা যাচাই করুন।
  7. মাঠ পর্চার মন্তব্য কলামে AD বা অনুরূপ মন্তব্য থাকলে জরিপ অফিস বা ক্যাম্প থেকে আপত্তির সর্বশেষ অবস্থা জেনে নিন।
  8. সহ-উত্তরাধিকার থাকলে ফারায়েজ বা বণ্টননামা দেখে সবার সম্মতি নিশ্চিত করুন।
  9. দলিল, বায়না, খতিয়ান, মাঠ পর্চা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তলবকারী বা স্বত্বলিপি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করুন।
  10. সর্বশেষ নামজারী মাঠ পর্চা, ডিসিআর ও খাজনার দাখিলা পরীক্ষা করুন এবং বকেয়া থাকলে পরিশোধের দায়িত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত থাকুন।
  11. তহসিল অফিস বা উপজেলা ভূমি অফিস থেকে নিশ্চিত করুন জমিটি সার্টিফিকেট মামলাভুক্ত বা নিলামকৃত নয়—কারণ ১৯১৩ সালের সরকারি পাওনা আদায় আইনের ৭ ধারায় সার্টিফিকেট মামলাভুক্ত সম্পত্তি বিক্রয়যোগ্য নয়।

উপরের ধাপগুলো মেনে চললে জমি ক্রয় ও নিবন্ধনের সময় বড় ধরনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয় এবং ভবিষ্যতে মালিকানা নিয়ে আইনি জটিলতার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে।