ভূমি জরিপ এবং রেকর্ড: ইতিহাস, গুরুত্ব ও বিভিন্ন ধাপ
ভূমি জরিপ কী, কেন করা হয়, এবং CS, SA, RS, PS ও BS জরিপের পার্থক্যসহ খতিয়ানের মূল তথ্য এক নজরে জানুন।
ভূমি জরিপ হচ্ছে ভূমির মালিকানা ও ব্যবহারের সরেজমিন ইতিহাস। The Survey Act, 1875 ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী সরকার ভূমির নকশা ও মালিকানার বিবরণ তৈরি করলে সেটিই রেকর্ড বা জরিপ নামে পরিচিত হয়।
রেকর্ড বা জরিপ মূলত মালিকানার বিবরণ এবং নকশার সমন্বিত ডকুমেন্ট। নির্দিষ্ট মৌজায় জমির অবস্থান, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, মালিক ও দখলদার—এই সব তথ্য খতিয়ানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়, যাকে Record of Rights (RoR) বলেও ডাকা হয়।
বাংলাদেশে প্রচলিত প্রধান ভূমি জরিপ
- CS – Cadastral Survey
- SA – State Acquisition Survey (1956)
- RS – Revisional Survey
- PS – Pakistan Survey
- BS – Bangladesh Survey (1990)
- সিটি জরিপ – City Survey (Dhaka Metropolitan)
CS জরিপ: ভারতের প্রথম সমগ্র ভূমি জরিপ
Cadastral Survey (CS) ১৮৮৯ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হয় এবং জমির খতিয়ান ও নকশা তৈরির জন্য বঙ্গীয় প্রজাতন্ত্র আইনের বিধান অনুসরণ করে। এই জরিপ প্রায় নির্ভুল এবং ভূমি বিরোধের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভিত্তি হিসাবে গণ্য হয়।
SA জরিপ: জমিদারী অধিগ্রহণের পর নতুন ব্যবস্থা
১৯৫০ সালের জমিদারী অধিগ্রহণ আইনের পর সরকার ১৯৫৬ সালে SA জরিপ শুরু করে। মূল লক্ষ্য ছিল জমিদার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জমির খাজনা নির্ধারণ এবং রায়তের সাথে সরকারের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন।
RS জরিপ: হালনাগাদ মালিকানা ও দখল
CS জরিপের প্রায় ৫০ বছর পর Revisional Survey (RS) পরিচালিত হয়। জমি, মালিকানা ও দখলদার হালনাগাদ করার উদ্দেশ্যে এই জরিপ করা হয় এবং ভূমি বিরোধ সমাধানে RS তথ্য এখনো নির্ভরযোগ্য বলে ধরা হয়।
PS ও BS জরিপ: স্বাধীনের আগে ও পরে
Pakistan Survey (PS) এবং Bangladesh Survey (BS) যথাক্রমে স্বাধীনতার আগে ও পরে পরিচালিত হয়। BS জরিপ ১৯৯০-এর দশকে সম্পন্ন হয়ে আধুনিক মানচিত্র ও খতিয়ান তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
সিটি জরিপ: নগর এলাকার ডিজিটাল খতিয়ান
City Survey ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে মালিকানার আধুনিক তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে সম্পন্ন হয়। এই জরিপের পরচা কম্পিউটার প্রিন্টে সরবরাহ করা হয়, যা নগর জমির ঝামেলা কমায়।
জরিপের ভূমিকা ও গুরুত্ব
সঠিক জরিপ ছাড়া ভূমির মালিকানা প্রমাণ করা কঠিন। প্রতিটি জরিপের ফলাফল খতিয়ান আকারে প্রকাশিত হয়, আর সেই খতিয়ান থেকেই জমির দাগ, মালিকানা, দখল ও অন্যান্য বিবরণ নির্ভরযোগ্যভাবে জানা যায়।