ভূমি রেজিস্ট্রেশন তথ্য
মৌখিক চুক্তির ঝুঁকি, রেজিস্ট্রেশন আইনের মূল বিধান এবং দলিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ধাপগুলোর বিস্তারিত আলোচনা।
সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় স্থায়ী ও নিরাপদ করতে রেজিস্ট্রেশন আইন অপরিহার্য। মৌখিক চুক্তি বা লিখিত কিন্তু অনিবন্ধিত দলিল পরে নানা প্রতারণার সুযোগ তৈরি করে; মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরনো বিক্রেতা আবার সম্পত্তি বিক্রি করা বা ঋণের জামানত দেওয়ার ঝুঁকি থাকে।
লিখিত দলিল থাকলেও তাতে পিছনের তারিখ দিয়ে রেজিস্ট্রি করার চেষ্টা বা দলিল হারিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। তাই আইন অনুযায়ী দলিল সম্পাদনের চার মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করলে তথ্য যাচাইযোগ্য থাকে এবং সরকারি নথি থেকে সহজেই সত্যতা নিশ্চিত করা যায়।
রেজিস্ট্রেশন আইনের প্রয়োজনীয়তা
- রেজিস্ট্রি দলিল মৌখিক দাবির তুলনায় অধিক গ্রহণযোগ্য; প্রতারণার সুযোগ কমে যায়।
- দলিল হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলেও নিবন্ধিত নকল থেকে স্বত্ব প্রমাণ করা যায়।
- পিছনের তারিখে দলিল রেজিস্ট্রি করার সুযোগ রোধ করতে সময়সীমাবদ্ধ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
রেজিস্ট্রেশনের স্থানীয় সেবা
দূরত্ব বিবেচনায় প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি সাব রেজিস্ট্রি অফিস স্থাপন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, চিলাহাটিতে সপ্তাহে চার দিন রেজিস্ট্রেশন সেবা চালু থাকে এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলায় দুটি সাব রেজিস্ট্রি অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করে—যাতে স্থানীয় জনগণ নির্ধারিত সময়ে দলিল দাখিল করতে পারেন।
রেজিস্ট্রেশন আইনের প্রকৃতি ও বিধান
জেরেমি বেনথামের মতে, রেজিস্ট্রেশন আইন মূল (substantive) ও সহায়ক (adjective) দুই ধরণের বিধান নিয়ে গঠিত। মূল আইন স্বত্বের সুরক্ষা দেয় এবং সহায়ক আইন আদালত ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের পথ দেখায়।
- সামন জারি, সাক্ষী হাজিরা ও দলিল উপস্থাপনসহ আদালত কার্যপ্রণালী নির্দিষ্ট করে।
- দলিলের বিধিনিষেধ ও দাখিল সময়সীমা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে।
- প্রত্যেক রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের নকল সংরক্ষণ ও সর্বসাধারণের পরিদর্শনের সুযোগ রাখে।
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার ধাপ
- দলিল সম্পাদনের পর চার মাসের মধ্যে নির্ধারিত রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হয়।
- রেজিস্ট্রি কর্মকর্তা যাচাই করেন আইনগত সব শর্ত পূরণ হয়েছে কি না এবং দলিল বৈধভাবে সম্পাদিত হয়েছে কি না।
- সন্তুষ্ট হলে তিনি দলিল গ্রহণ করে বহি বা বালামে নকল করান, অফিসের মোহর ও স্বাক্ষর যোগ করে প্রত্যয়ন দেন এবং মূল দলিল ফেরত দেন।
- উইল ছাড়া স্থাবর সম্পত্তির অন্যান্য নিবন্ধিত দলিল সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
রেজিস্ট্রেশন আইনের উদ্দেশ্য
- দলিলের যথার্থতা সম্পর্কে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা দেওয়া।
- সম্পত্তি হস্তান্তরের তথ্য প্রচার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
- জাল দলিল ও মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে প্রতারণা প্রতিরোধ করা।
- একই সম্পত্তির পূর্ববর্তী স্বত্ব ও বিধিবিধান যাচাইয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা।
- স্বত্ব-দলিলের নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং মূল দলিল নষ্ট হলেও প্রমাণের ব্যবস্থা রাখা।
রেজিস্ট্রেশন আইন এই উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে স্থাবর সম্পত্তির স্বত্ব, নিরাপত্তা ও বিচারিক স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করে। তাই আইনটি যথাযথভাবে অনুসরণ করলে দীর্ঘমেয়াদি বিরোধ বা প্রতারণার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।