আইনগত নির্দেশিকাভূমি গাইড
ভূমি রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত বিষয়াদি
October 27, 2025
•
১০ মিনিটের পড়া
•
Mouza Map টিম
দলিল লেখার সময় থেকে রেজিস্ট্রেশন ও ক্রয়-পরবর্তী যাচাই পর্যন্ত ৩১টি মূল সতর্কতা ও বাধ্যতামূলক নয় এমন দলিলের তালিকা।
জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় দলিল প্রস্তুত, রেজিস্ট্রেশন ও সত্যতা যাচাইয়ে সচেতন না হলে দীর্ঘমেয়াদি বিরোধ ও ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। নিচে দুই ধাপে ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং কোন দলিল রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক নয় তার তালিকা দেওয়া হলো।
দলিল লেখার সময় ক্রেতার করণীয়
- দলিল দাতা আইনত সাবালক ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন কিনা নিশ্চিত হওয়া।
- পুরাতন ও নতুন দলিলের শিরোনাম, সাফ কবলা, বায়নাপত্র ইত্যাদি মিলিয়ে দেখা।
- প্রস্তাবিত জমির পরিমাণ, বিশেষ মূল্য ও বায়না পরিমাণ স্পষ্ট করা।
- পক্ষ পরিচয়: দলিল দাতা ও গ্রহীতার সম্পূর্ণ সনাক্তকরণ।
- উভয় পক্ষের পূর্ণ নাম, ঠিকানা, পেশা, ধর্ম উল্লেখ করা।
- স্বত্ব বা মালিকানা বর্ণনা: পূর্ব দলিল নম্বর, তারিখ, খতিয়ান/পর্চা ইত্যাদি।
- উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক হলে মূল মালিকের সাথে সম্পর্ক যাচাই।
- তফসিলে জেলা, উপজেলা, রেজিস্ট্রি অফিস, মৌজা, দাগ/খতিয়ান, জমির শ্রেণী উল্লেখ।
- চৌহদ্দি: চার পাশের জমির বিবরণ ও মালিকের নাম নিশ্চিত করা।
- দলিলের প্রথম পৃষ্ঠায় ও শেষ পৃষ্ঠায় দাতার স্বাক্ষর বা টিপসহি নিশ্চিত করা।
- দলিল লেখকের স্বাক্ষর, কমপক্ষে দুই সাক্ষীর স্বাক্ষর এবং সনাক্তকারীর স্বাক্ষর থাকা।
- কাটাকাটি বা ঘষামাজা এড়ানো; থাকলে কৈফিয়ত লিখে স্বাক্ষর করা।
- প্রতিটি দাগে মোট জমি ও ভগ্নাংশ স্পষ্টভাবে লেখা; একাধিক দাগ একত্রে না লেখা।
- দাগ ও খতিয়ান নম্বর সঠিকভাবে লিখানো এবং তহসিল অফিস থেকে আগেই নিশ্চিত হওয়া।
ক্রয় ও রেজিস্ট্রেশনের সময় সতর্কতা
- সর্বশেষ খতিয়ান ও নকশা যাচাই।
- মৌজা, দাগ, খতিয়ান ও পরিমাণ মিলিয়ে দেখা।
- সি.এস, এস.এ, আর.এস রেকর্ড ও মাঠ পর্চা পর্যালোচনা।
- ক্রয়সূত্রে মালিক হলে পূর্ব দলিল ও রেকর্ড মেলানো।
- উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক হলে সর্বশেষ রেকর্ডে নাম আছে কি না যাচাই এবং সম্পর্ক নিশ্চিত।
- জরিপাধীন এলাকায় মাঠ পর্চা বৈধ ও মন্তব্য কলামে আপত্তি (AD) থাকলে জরিপ অফিসে অবস্থা জানা।
- দলিল, বায়না, খতিয়ান, মাঠ পর্চা তহসিল/ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাচাই।
- সর্বশেষ নামজারী পর্চা, ডিসিআর, খাজনার দাখিলা পরীক্ষা এবং বকেয়া থাকলে দায়িত্ব বোঝা।
- সার্টিফিকেট মামলাভুক্ত বা নিলামকৃত কিনা তহসিল/উপজেলা ভূমি অফিসে নিশ্চিত করা।
- ভূমি অধিগ্রহণের নোটিশ আছে কি না জেলা প্রশাসকের L.A শাখায় খোঁজ নেওয়া।
- মামলাভুক্ত জমি কিনা আদালতে অনুসন্ধান করে জানা।
- মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দখল, ব্যবহার ও নকশার মিল পরীক্ষা।
- সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বা জেলা রেজিস্ট্রার থেকে নিকটবর্তী কেনাবেচার তথ্য সংগ্রহ।
- জমি ব্যাংক ঋণের জন্য দায়বদ্ধ কিনা যাচাই।
- জমিতে যাতায়াতের রাস্তা আছে কি না সরেজমিনে দেখা।
- সরকারি নিষিদ্ধ এলাকায় জমি বিক্রয়ের প্রলোভন সম্পর্কে সতর্ক থাকা (যেমন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন মৌজা)।
- শহরাঞ্চলে লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে আপত্তি-সহ সুযোগ থাকলে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ।
রেজিস্ট্রেশন থেকে অব্যাহত দলিল
- রাজস্ব আদালতের বাটোয়ারা সোলেমানা যা আদালত গ্রহণ করেছে।
- পরিবারের নামান্তর বা পারস্পরিক বন্দোবস্ত যেখানে অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় না।
- আদালতের ডিক্রি, রায় বা আদেশ।
- অতীত স্বত্ব স্বীকৃতিকারী পারিবারিক বন্দোবস্ত।
- দেওয়ানী আদালত/সার্টিফিকেট অফিসের নিলামকৃত সম্পত্তির বায়নানামা।
- ১০০ টাকার কম মূল্যমানের স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল।
- পোষ্যপুত্র বা পালক পুত্র গ্রহণের দলিল।
নিয়ম মেনে দলিল প্রস্তুতি, জমির রেকর্ড যাচাই এবং নিষিদ্ধ এলাকা সম্পর্কে সচেতন থাকলে জমি ক্রয় ও রেজিস্ট্রেশন নিরাপদ ও আইনসম্মত হয়।