জমির কানি ও গন্ডা
ভূমি ক্রয়ের আগে খতিয়ান, দাগ, নামজারী ও আইনগত সীমাবদ্ধতা যাচাই করে প্রতারণা এড়ানোর বাস্তব নির্দেশিকা।
জমির কানি ও গন্ডা নিয়ে কথা বলার মানে শুধু আয়তন জানা নয়; মূল বিষয় হচ্ছে জমির প্রতিটি কাগজপত্র এবং মালিকানার শৃঙ্খল সঠিক আছে কি না তা নিশ্চিত করা।
কেবলমাত্র প্রকৃত ভূমির মালিকই জমি হস্তান্তর করতে পারেন। তাই ক্রেতার দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিটি দলিল, খতিয়ান, দাগ এবং উত্তরাধিকারী সম্পর্ক যাচাই করে সঠিকতা নিশ্চিত করা।
মালিকানা যাচাইয়ের মৌলিক ধাপ
- বিক্রীত ভূমির সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে বিক্রেতার নাম আছে কিনা যাচাই করুন।
- যদি বিক্রেতার নাম খতিয়ানে না থাকে, তবে তার মালিকানা বৈধ কাগজপত্র দ্বারা প্রমাণ করতে বলুন।
- নিম্নোক্ত তথ্যগুলো দলিল ও রেকর্ডে মিলে যাচ্ছে কিনা পরীক্ষা করুন:
- ভূমিটি কোন মৌজায় অবস্থিত
- সংশ্লিষ্ট খতিয়ান এবং দাগ নম্বর
- উক্ত দাগে মোট জমির পরিমাণ
- খতিয়ানে বিক্রেতার অংশ বা হিস্যা অনুযায়ী পরিমাণ
ক্রয় দলিল মিলিয়ে দেখার শর্ত
খতিয়ানভুক্ত মালিকের পর থেকে বর্তমান বিক্রেতা পর্যন্ত মালিকানার ধারাবাহিকতা পরিষ্কার না থাকলে প্রতারণার সুযোগ তৈরি হয়। তাই দলিল পর্যালোচনায় প্রতিটি ধাপ খতিয়ে দেখা জরুরি।
- দলিলে উল্লেখিত দাতা ও জমির বিবরণ সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে আছে কিনা মিলিয়ে দেখুন; না থাকলে মালিকানার প্রমাণ উপস্থাপন করতে বলুন।
- খতিয়ানভুক্ত মালিক থেকে বর্তমান বিক্রেতা পর্যন্ত সব ধারাবাহিক দলিল (পিট দলিল) পরীক্ষা করুন।
- হাল খতিয়ান ও দাগ চালু হওয়ার আগে উল্লেখিত সাবেক খতিয়ান ও দাগ নম্বরের সঙ্গে বর্তমান নম্বরের সামঞ্জস্য যাচাই করুন।
- বিক্রয়ের পর ক্রেতা নামজারী করেছে কি না এবং বিক্রেতা গোপনে অন্যের কাছে একই জমি বিক্রি করেছে কি না অনুসন্ধান করুন।
- বিক্রীত ভূমি বাস্তবে বিক্রেতার দখলে আছে কিনা দেখে নিন।
- বকেয়া ভূমি খাজনা বা উন্নয়ন করের জন্য জমি নিলামে বিক্রি বা সরকার খাস করেছে কি না নিশ্চিত করুন।
- পরিত্যক্ত বা অর্পিত সম্পত্তি (পরিত্যক্ত হিন্দু মালিকের জমি) হিসেবে তালিকাভুক্ত কিনা যাচাই করুন।
- ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতা করে দেশত্যাগকারীর (পি-ও ১৬/৭২) সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে কি না পরীক্ষা করুন।
- দীর্ঘদিন খাজনা অনাদায়ী থাকলে বা মারফতদার খাজনা জমা দিলে তহসিল অফিস থেকে প্রকৃত মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
- খাজনা বা উন্নয়ন কর অপরিশোধিত থাকলে জমি নিলামে খাস হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না যাচাই করুন।
- Test Acquisition and Tenancy Act-এর ৯৭ ধারায় আদিবাসী ভূমি কিনতে হলে রেভিনিউ অফিসারের লিখিত সম্মতি আছে কি না নিশ্চিত করুন।
- প্রেসিডেন্ট আদেশ নং ৯৮/৭২ ও ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুসারে ৬০ বিঘার অতিরিক্ত জমি ক্রয় করলে বাজেয়াপ্ত হতে পারে—সেই সীমা লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না পরীক্ষা করুন।
- দলিলে ভায়া দলিলের তথ্য থাকলে সংশ্লিষ্ট নম্বর, দাতা ও গ্রহীতার বিবরণ সঠিকভাবে উল্লেখ আছে কি না নিশ্চিত করুন।
- দলিলের তফসিলে জেলা, থানা, মৌজা, খতিয়ান, দাগ, মোট জমির পরিমাণ এবং চৌহদ্দি (রাস্তা বা পৌর নম্বরসহ) সঠিকভাবে মিলেছে কি না দেখুন।
উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করলে কানি-গন্ডার হিসাবে জমির পরিমাণ যেমন বোঝা যায়, তেমনি মালিকানার ধারাবাহিকতাও নিশ্চিত হয়। এতে প্রতারণার ঝুঁকি কমে এবং রেজিস্ট্রেশনের পরে আইনি জটিলতার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।