আইন ও নীতিমালাভূমি রেকর্ড

ভূমি ক্রয়-বিক্রয়: আইন, কর ও নিরাপদ লেনদেনের নির্দেশিকা

September 21, 2025 ৮ মিনিটের পড়া Mouza Map টিম

ভূমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় কর বণ্টন, দলিল সংশোধন, জাল দলিল মোকাবিলা, বিশেষ রেজিস্ট্রি ব্যবস্থা ও ক্রয়ের পর করণীয় সম্পর্কে জানুন।

ভূমি ক্রয়-বিক্রয়ের প্রতিটি ধাপে আইনি নিয়ম মেনে চলা জরুরি। ভ্যাট-উৎসকর থেকে দলিল সংশোধন, জাল দলিল বাতিল, বিশেষ রেজিস্ট্রি পদ্ধতি এবং ক্রেতার পরবর্তী করণীয়—সবকিছু জানলে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি এড়ানো যায়।

কর ও ফি কে পরিশোধ করবে?

  • আয়কর আইনের বিধান অনুযায়ী ভ্যাট ও উৎসকর বিক্রেতার আয়ের ওপর ধার্য; তাই এসব কর বিক্রেতাই সরকারি কোষাগারে জমা দেবেন।
  • জমির সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর ও ফি (যেমন হস্তান্তর ফি, ভূমি উন্নয়ন কর) সাধারণত ক্রেতা পরিশোধ করে।

দলিলে ভুল হলে কী করবেন?

  • দাগ, খতিয়ান, মৌজা বা চৌহদ্দিতে ভুল ধরা পড়লে দ্রুত সংশোধনের আবেদন করুন।
  • রেজিস্ট্রেশনের তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধনের মামলা করতে হয়; সময় পার হলে ঘোষণামূলক মামলা দাখিল করে রায়ের ভিত্তিতে সংশোধন করতে হয়।

জাল দলিল শনাক্ত ও বাতিল

  • প্রতারণা করে সৃজিত দলিল সম্পর্কে জানতে পারার তিন বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে বাতিলের মামলা করুন।
  • দলিল বাতিলের সাথে সাথে সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারের দাবিও তুলুন।

বিশেষ রেজিস্ট্রি পদ্ধতি

  • কমিশনে রেজিস্ট্রি: রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে অক্ষম ব্যক্তি সাবরেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন করলে তিনি বা তার প্রতিনিধি বাসস্থানে গিয়ে স্বাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারেন (রেজিস্ট্রেশন আইন ৩৮ ধারা)।
  • ভিজিটে রেজিস্ট্রি: দলিলদাতা ও গ্রহীতা দুজনেই যেতে না পারলে অফিসারকে বাড়িতে গিয়ে দলিল গ্রহণের জন্য আবেদন করা যায় (ধারা ৩১); পৃথক ভিজিট ফি প্রযোজ্য।

প্রতিষ্ঠানের নামে দলিল

প্রতিষ্ঠানের নামে জমি দান বা ক্রয় করতে হলে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের নামেই দলিল করতে হবে। কোম্পানির ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অনুমোদিত কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দাতা বা গ্রহীতা হতে পারেন।

দলিল লিখনের সময় সতর্কতা

সারফ দলিলে ক্যাফিয়ত কলামে সংশোধিত অংশের পৃষ্ঠা ও লাইন নম্বর উল্লেখ করুন এবং দলিল লেখক স্বাক্ষর করুন—এভাবে আংশিক ভুলও নির্ভরযোগ্যভাবে ঠিক করা যায়।

জমি হস্তান্তরে বাধা

  • নাবালক, শত্রু দেশের নাগরিক, আদালতে দেউলিয়া ঘোষিত বা মানসিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির দলিল অকার্যকর গণ্য হয়।
  • কোনো আইনগত নিষেধাজ্ঞা থাকা সম্পত্তি হস্তান্তর যোগ্য নয়।
  • ভয়-ভীতি, প্রলোভন বা জোর করে সম্পাদিত দলিল বাতিল হিসেবে বিবেচিত হয়।

জমি ক্রয়ের পর ক্রেতার করণীয়

  • রেজিস্ট্রি শেষে জমি পরিমাপ করে সীমানা নিশ্চিত করুন এবং পূর্ব মালিকের কাছ থেকে দখল নিন।
  • দখল প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজন হলে সীমানা প্রাচীর বা স্থাপনা নির্মাণ করুন।
  • সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে মূল দলিল সংগ্রহ করুন; বিলম্ব হলে সার্টিফায়েড কপি নিন।
  • সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারি আবেদনের মাধ্যমে খতিয়ান হালনাগাদ করুন।
  • নামজারি অনুমোদনের পর ডিসিআর ও ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করুন।
  • দখল ও নামজারি বিলম্বিত করলে অসাধু বিক্রেতা পুনরায় জমি বিক্রয়ের চেষ্টা করতে পারে—তাই দ্রুত পদক্ষেপ নিন।

ভূমি লেনদেনের সময় উভয় পক্ষ স্বচ্ছতা ও পারস্পরিক আস্থা বজায় রাখলে জটিলতা ও প্রতারণার সম্ভাবনা কমে যায়।